Acne বা ব্রণ এবং পিম্পল শুধুমাত্র ত্বকের যত্নের সমস্যা নয়, এটি আপনার জীবনযাত্রা এবং দৈনন্দিন অভ্যাসের সাথেও গভীরভাবে জড়িত। ঘরোয়া জীবনযাত্রা, পোশাক-আশাক, তোয়ালে, বালিশ ইত্যাদির সঠিক ব্যবহার ও পরিচ্ছন্নতা ব্রণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চলুন জেনে নিই, ব্রণ বা পিম্পল থাকলে কী ধরনের জীবনযাপন করা উচিত এবং কীভাবে
জীবনযাত্রা (Lifestyle):
ব্রণ বা পিম্পল থাকলে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত, যা ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে এবং টক্সিন বের করে দেয়। তাজা ফল, শাকসবজি, বাদাম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার ত্বকের জন্য উপকারী। তবে চিনি, ফাস্ট ফুড এবং তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো ব্রণ বাড়াতে পারে। দুধ ও ডেইরি প্রোডাক্টও সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, কারণ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এগুলো ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে।
ঘুমের অভ্যাসও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত, কারণ ঘুমের অভাবে ত্বকের সমস্যা বাড়ে। এছাড়া, বালিশের কভার নিয়মিত পরিবর্তন করা উচিত, কারণ বালিশের কভারে তেল, ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া জমে ব্রণ হতে পারে। মানসিক চাপও ব্রণ বাড়াতে পারে, তাই যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে স্ট্রেস ম্যানেজ করা উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং ত্বক সুস্থ থাকে, তবে ব্যায়ামের পর মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করা জরুরি।
পোশাক-আশাক (Clothing):
পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সুতি কাপড় পরা উচিত, কারণ এটি ত্বকে বাতাস চলাচল করতে দেয় এবং ঘাম শুষে নেয়। টাইট কাপড় এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষ করে পিঠে ব্রণ হতে পারে। প্রতিদিন পরিষ্কার কাপড় পরা উচিত এবং ধোয়ার সময় হালকা সাবান ব্যবহার করা উচিত। ব্যবহৃত কাপড় ভালোভাবে শুকিয়ে নেওয়া উচিত, কারণ ভেজা কাপড়ে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে।
বালিশ (Pillow):
বালিশের ব্যবহারেও কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। বালিশের কভার নিয়মিত পরিবর্তন করা উচিত, কারণ এতে তেল, ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া জমে ব্রণ হতে পারে। সপ্তাহে অন্তত ২ বার বালিশের কভার পরিবর্তন করা উচিত। সিল্ক বা সাটিন কভার ব্যবহার করা যেতে পারে, কারণ এটি ত্বকের ঘর্ষণ কমায় এবং ব্রণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া, বালিশ নিয়মিত ধোয়া উচিত, বিশেষ করে যদি তেলযুক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয়।
তোয়ালে (Towel):
তোয়ালে ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। পরিষ্কার তোয়ালে ব্যবহার করা উচিত এবং নিয়মিত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা উচিত। ভেজা তোয়ালে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর জন্য আদর্শ স্থান, তাই তোয়ালে শুকিয়ে ব্যবহার করা উচিত। মুখ মোছার জন্য আলাদা তোয়ালে ব্যবহার করা উচিত এবং সপ্তাহে অন্তত ২ বার পরিবর্তন করা উচিত।
চুলে তেল দেওয়ার সময় সতর্কতা:
চুলে তেল দেওয়ার পর ব্রণ হওয়ার সমস্যা থেকে বাঁচতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। চুলে তেল দেওয়ার সময় মুখ, ঘাড় ও কপালে তেল যাতে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন। তেল দেওয়ার পর চুল ভালোভাবে বেঁধে রাখুন যাতে তেল ত্বকে ছড়িয়ে না পড়ে। চুলে তেল দেওয়ার পর হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন এবং এরপর হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন। চুলে তেল দেওয়ার পর অন্তত ১-২ ঘণ্টা রেখে তা ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তেল চুলে রেখে না ঘুমানোই ভালো। চুলে অতিরিক্ত তেল দেওয়া এড়িয়ে চলুন এবং অল্প পরিমাণে তেল ব্যবহার করুন।
ঘাম বা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যত্ন:
ঘাম বা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। ঘাম হলে তা দ্রুত পরিষ্কার করুন, কারণ ঘাম ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে। ঘাম পরিষ্কারের পর হালকা ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ওয়াটার-বেসড প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন, যা ত্বককে হাইড্রেট করে কিন্তু তেলতেলে ভাব তৈরি করে না। নন-কমেডোজেনিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন, যা ছিদ্র বন্ধ না করে।
শেষ কথা:
ব্রণ বা পিম্পল নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রা, পোশাক-আশাক, বালিশ, তোয়ালে ইত্যাদির সঠিক ব্যবহার ও পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুলে তেল দেওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন, ঘাম বা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বিশেষ যত্ন নিন এবং উপযুক্ত স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। নিয়মিত যত্ন নিলে ত্বক ও চুল দুটোই সুস্থ ও সুন্দর থাকবে।
ব্রণ সমস্যার জন্য স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট:
ব্রণ সমস্যা থাকলে বা প্রতিরোধ করতে চাইলে নিচের ধরনের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিত। প্রথমত, ক্লিনজার হিসেবে স্যালিসিলিক অ্যাসিড বা বেনজয়েল পারঅক্সাইড যুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করুন, যা ব্রণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নন-কমেডোজেনিক ক্লিনজার ব্যবহার করুন, যা ছিদ্র বন্ধ না করে। টোনার হিসেবে টি ট্রি অয়েল বা উইচ হ্যাজেল যুক্ত টোনার ব্যবহার করুন, যা ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। অ্যালকোহল-ফ্রি টোনার ব্যবহার করুন, যা ত্বকের pH ব্যালেন্স বজায় রাখে।
ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ওয়াটার-বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যা ত্বককে হাইড্রেট করে কিন্তু তেলতেলে ভাব তৈরি করে না। নন-কমেডোজেনিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যা ছিদ্র বন্ধ না করে। সানস্ক্রিন হিসেবে অয়েল-ফ্রি ও নন-কমেডোজেনিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, যা ব্রণ প্রবণ ত্বকের জন্য উপযুক্ত। SPF 30 বা 50 এবং PA++++ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, যা ইউভিএ ও ইউভিবি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
স্পট ট্রিটমেন্ট হিসেবে বেনজয়েল পারঅক্সাইড বা স্যালিসিলিক অ্যাসিড যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন, যা ব্রণের দাগ ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করুন, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। এক্সফোলিয়েটর হিসেবে হালকা স্ক্রাব বা কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট (AHA/BHA) ব্যবহার করুন, যা সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করা উচিত। এটি মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে মসৃণ করে।
তবে এই ধরনের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এর প্রাইস অনেক বেশি হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে The Ordinary ব্র্যান্ডটি হতে আপনার জন্যে একটা ভালো অপশন কারন The Ordinary ব্রান্ডের প্রডাক্ট দামে একদমি হাতের নাগালে অর্থাৎ সাশ্রয়ী এবং খুবি কার্যকর
The Ordinary ব্র্যান্ডটি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের জন্য খুবই জনপ্রিয় এবং এদের প্রোডাক্টগুলো অত্যন্ত কার্যকরী, বিশেষ করে ব্রণ, পিম্পল এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যার জন্য। নিচে The Ordinary ব্র্যান্ডের কিছু প্রোডাক্টের তালিকা দেওয়া হলো, যা ব্রণ সমস্যার জন্য ব্যবহার করতে পারেন:
১. The Ordinary Niacinamide 10% + Zinc 1%:
উপকারিতা: এই সিরাম ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে, ছিদ্র পরিষ্কার করে এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। নিয়াসিনামাইড ত্বকের লালভাব ও ডার্ক স্পট কমায়, আর জিঙ্ক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: দিনে দুইবার ক্লিনজিং ও টোনিং এর পর ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার বা সানস্ক্রিনের আগে প্রয়োগ করুন।
২. The Ordinary Salicylic Acid 2% Solution:
উপকারিতা: স্যালিসিলিক অ্যাসিড ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার করে, মৃত কোষ দূর করে এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্রণের দাগ ও ফোলাভাব কমাতেও কার্যকরী।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: দিনে একবার রাতের রুটিনে ব্যবহার করুন। ক্লিনজিং ও টোনিং এর পর প্রয়োগ করুন।
৩. The Ordinary AHA 30% + BHA 2% Peeling Solution:
উপকারিতা: এই মাস্ক ত্বকের গভীর স্তরে কাজ করে, মৃত কোষ দূর করে এবং ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস কমাতে সাহায্য করে। AHA (Glycolic Acid) এবং BHA (Salicylic Acid) এর মিশ্রণ ত্বককে মসৃণ করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: সপ্তাহে একবার ১০ মিনিটের জন্য মুখে প্রয়োগ করুন এবং ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এটি শক্তিশালী প্রোডাক্ট, তাই ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করুন।
৪. The Ordinary Azelaic Acid Suspension 10%:
উপকারিতা: অ্যাজেলাইক অ্যাসিড ব্রণ, রোসেসিয়া এবং হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের লালভাব ও ডার্ক স্পট কমায়।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: দিনে দুইবার ক্লিনজিং ও টোনিং এর পর ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার বা সানস্ক্রিনের আগে প্রয়োগ করুন।
৫. The Ordinary Glycolic Acid 7% Toning Solution:
উপকারিতা: গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: দিনে একবার রাতের রুটিনে ক্লিনজিং এর পর ব্যবহার করুন। টোনার হিসেবে প্রয়োগ করুন।
৬. The Ordinary Lactic Acid 10% + HA:
উপকারিতা: ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে মসৃণ করে। এটি ব্রণ ও ডার্ক স্পট কমাতে সাহায্য করে। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: দিনে একবার রাতের রুটিনে ব্যবহার করুন। ক্লিনজিং ও টোনিং এর পর প্রয়োগ করুন।
৭. The Ordinary Retinol 1% in Squalane:
উপকারিতা: রেটিনল ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, বলিরেখা কমায় এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: সপ্তাহে ২-৩ বার রাতের রুটিনে ব্যবহার করুন। ক্লিনজিং ও টোনিং এর পর প্রয়োগ করুন। সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
৮. The Ordinary Alpha Arbutin 2% + HA:
উপকারিতা: আলফা আরবুটিন ডার্ক স্পট ও হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্রণের দাগ কমাতেও কার্যকরী।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: দিনে দুইবার ক্লিনজিং ও টোনিং এর পর ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার বা সানস্ক্রিনের আগে প্রয়োগ করুন।
৯. The Ordinary Hyaluronic Acid 2% + B5:
উপকারিতা: হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে এবং ব্রণ সমস্যার কারণে শুষ্ক ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: দিনে দুইবার ক্লিনজিং ও টোনিং এর পর ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার বা সানস্ক্রিনের আগে প্রয়োগ করুন।
১০. The Ordinary Natural Moisturizing Factors + HA:
উপকারিতা: এই ময়েশ্চারাইজার ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে এবং ব্রণ প্রবণ ত্বকের জন্য উপযুক্ত। এটি নন-কমেডোজেনিক এবং ছিদ্র বন্ধ করে না।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: দিনে দুইবার ক্লিনজিং ও টোনিং এর পর ব্যবহার করুন।
The Ordinary ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টগুলো অত্যন্ত কার্যকরী এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়। তবে মনে রাখবেন, এই প্রোডাক্টগুলো অনেক POWERFULL , তাই ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করুন এবং ধীরে ধীরে রুটিনে যোগ করুন। প্রয়োজনে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। নিয়মিত যত্ন নিলে ত্বক সুস্থ ও ব্রণমুক্ত থাকবে।